বন্যার পানিতে খামার থেকে ভেসে গেছে মুরগি। দুই–একটি যা উদ্ধার করতে পেরেছেন তা নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন এই ব্যক্তি। গতকাল দুপুরে ফেনী সাউথ ইস্ট ডিগ্রি কলেজ আশ্রয়কেন্দ্রের কাছে.
বৃষ্টি কমে আসায় দেশে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। অনেক জায়গায় পানি নামতে শুরু করেছে। তবে ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লার অনেক উপজেলায় পরিস্থিতি এখনো খারাপ। এর মধ্যে ফেনীর গ্রামাঞ্চলে অন্তত এক লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে আটকে আছেন। গতকাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ফেনীর বন্যাকবলিত এলাকায় মুঠোফোন নেটওয়ার্ক ভালোভাবে কাজ করছিল না। ফলে সেখানকার প্রকৃত পরিস্থিতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণাও পাওয়া যায়নি।
বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে শুকনা খাবার ও সুপেয় পানির সংকট দেখা দিচ্ছে। অনেক জায়গায় স্বেচ্ছাসেবীরা ত্রাণ নিয়ে পৌঁছাতে পারছেন না।
সরকারি হিসাবে, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত বন্যায় দেশে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ৫ জন, কুমিল্লায় ৪ জন, নোয়াখালীতে ৩ জন, কক্সবাজারে ৩ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১ জন, ফেনীতে ১ জন ও লক্ষ্মীপুরে ১ জন মারা গেছেন।দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০ আগস্ট থেকে গতকাল পর্যন্ত দেশের ১১টি জেলা বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। সেগুলো হলো ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজার। এসব জেলার ৭৭টি উপজেলা আক্রান্ত হয়েছে। মোট ৯ লাখ ৭৯ হাজার ৯০১টি পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সংখ্যা ৫০ লাখ ৯৩ হাজার ৫৩০। চিকিৎসাসেবায় চালু রয়েছে ৭৬৯টি মেডিকেল টিম।
মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়িতে বন্যার্তদের উদ্ধার কার্যক্রমে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট ও কন্টিনজেন্ট নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
ফেনীর গ্রামাঞ্চলে পানিবন্দী লাখো মানুষ
এবার যেসব জেলায় বন্যার ভয়াবহতা বেশি, তার একটি ফেনী। ফেনী সদর উপজেলার ১০ নম্বর ছনুয়া ইউনিয়নের উত্তর টংগিরপাড় হাজিবাড়ি এলাকায় এক পরিবারের সাতজন চার দিন ধরে আটকে আছেন। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। কোনো নৌকাও উদ্ধারে যেতে পারছে না। ওই পরিবারের একজন সদস্য পেশায় শিক্ষক ফারজানা আক্তার আছেন চট্টগ্রাম নগরে। তিনি প্রথম আলোকে এই তথ্য জানিয়েছেন।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স চট্টগ্রাম জেলার উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের চারটি দল ফেনীতে গতকাল উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়ে ২৭ জনকে উদ্ধার করে। স্থানীয় বাসিন্দা ও স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে কথা বলে তাঁরা মনে করছেন, অন্তত এক লাখ মানুষ এখনো তাঁদের বাড়িঘরে আটকে আছেন।
# বন্যাকবলিত ১১ জেলা: ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজার।
# সাত জেলায় গতকাল পর্যন্ত ১৮ জনের মৃত্যু।
# ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সংখ্যা প্রায় ৫১ লাখ।
# মোট ৩ হাজার ৫১৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
# আশ্রয়কেন্দ্রে ৩ লাখের বেশি মানুষ।
# চিকিৎসাসেবায় চালু রয়েছে ৭৬৯টি মেডিকেল টিম।
ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী, পরশুরাম, ফেনী সদর, দাগনভূঞা ও সোনাগাজী—এ ছয় উপজেলা পুরোপুরি বন্যাকবলিত। স্থানীয় স্কুল-কলেজ, মসজিদ ও মন্দিরের ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন অনেকে। সেখানে সুপেয় পানি ও খাবারের সংকট আরও প্রকট হয়েছে।
চট্টগ্রাম থেকে যাওয়া ত্রাণবাহী ট্রাক ও উদ্ধারের কাজে যুক্ত স্বেচ্ছাসেবীরা প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে পৌঁছাতে পারছেন না। রাস্তার ধারের গ্রামগুলোতে তাঁরা ত্রাণ দিচ্ছেন। স্বেচ্ছাসেবীরা জানিয়েছেন, গতকাল সকাল সাতটা থেকে বিকেল পর্যন্ত বিভিন্ন গ্রামের অন্তত ৭০ জনকে তাঁরা উদ্ধার করেছেন।
গত বুধবার সন্ধ্যা থেকে ফেনীতে বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। তবে গত তিন দিন বৃষ্টি না হওয়ায় ফেনী সদরের কিছু এলাকায় পানি নেমেছে।
0 Comments