পদার্থবিজ্ঞান হলো বিজ্ঞানের সবচেয়ে মৌলিক শাখা। পদার্থবিজ্ঞান
বলতে বলা যেতে পারে এটা হলো গণিতের বাস্তব রূপ। এখানে বিভিন্ন গাণিতিক
হিসাব নিকাশ দ্বারা প্রকৃতির বিভিন্ন ঘটনাকে বর্ণনা করা হয়। অত্যন্ত
বিমূর্তভাবে বলতে গেলে, পদার্থবিজ্ঞান হলো সেই বিজ্ঞান যার লক্ষ্য আমাদের
চারপাশের বিশ্বকে বোঝার চেষ্টা করা।[১]
পদার্থবিজ্ঞানে পদার্থ, পদার্থের গতি এবং স্থান ও সময় মাধ্যমে তার আচরণ,
শক্তি ও বল সংক্রান্ত রাশি নিয়ে অধ্যয়ন করা হয়। পদার্থবিজ্ঞান বিজ্ঞানের
সবচেয়ে মৌলিক শাখাগুলোর মধ্যে একটি । পদার্থবিজ্ঞানের মূল লক্ষ্য হলো
মহাবিশ্বের আচরণ সম্পর্কে অনুধাবন করা
এটা হলো বিজ্ঞানের সবচেয়ে প্রাচীনতম শাখা। তাই এর ইতিহাস অনেক দীর্ঘ।
পদার্থবিজ্ঞান হলো বিজ্ঞানের একটি শাখা যার প্রাথমিক বিষয় বস্তু
শক্তি। পদার্থবিজ্ঞানের আবিষ্কারগুলো প্রাকৃতিক বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি এর
উপর।এখনকার পদার্থবিজ্ঞানকে শাস্ত্রীয়/সাধারণ পদার্থবিজ্ঞান এবং আধুনিক
পদার্থবিজ্ঞানে বিভক্ত করা যেতে পারে/
গ্রিকদের অবদান
গ্রিক বিজ্ঞানী থেলিসের
(খ্রিস্টপূর্বাব্দ ৫৮৬-৬২৪) নাম আলাদাভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে, কারণ
তিনিই প্রথম কার্যকারণ এবং যুক্তি ছাড়া শুধু ধর্ম, অতীন্দ্রিয় এবং
পৌরাণিক কাহিনিভিত্তিক ব্যাখ্যা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছিলেন থেলিস, সূর্যগ্রহণের
ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন এবং লােডস্টোনের চৌম্বক ধর্ম সম্পর্কে জানতেন। সেই
সময়ের গণিতবিদ ও বিজ্ঞানীদের মাঝে পিথাগােরাস (৫২৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) একটি
স্মরণীয় নাম। জ্যামিতি ছাড়াও কম্পমান তারের ওপর তার মৌলিক কাজ ছিল।
গ্রিক দার্শনিক ডেমােক্রিটাস (৪৬০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) প্রথম ধারণা দেন যে
পদার্থের অবিভাজ্য একক আছে, যার নাম দেওয়া হয়েছিল এটম (এই নামটি আধুনিক
পদার্থবিজ্ঞান ব্যবহার করে থাকে)। তবে বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় তার ধারণাটি
প্রমাণের কোনাে সুযােগ ছিল না বলে সেটি সবার কাছে গ্রহণযােগ্য ছিল না। সেই
সময়কার সবচেয়ে বড় দার্শনিক এবং বিজ্ঞানী এরিস্টটলের মাটি, পানি, বাতাস ও
আগুন দিয়ে সবকিছু তৈরি হওয়ার মতবাদটিই অনেক বেশি গ্রহণযােগ্য ছিল।
(আরিস্তারাকস (৩১০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) প্রথমে সূর্যকেন্দ্রিক সৌরজগতের ধারণা
দিয়েছিলেন এবং তার অনুসারী সেলেউকাস যুক্তিতর্ক দিয়ে সেটি প্রমাণ
করেছিলেন, যদিও সেই যুক্তিগুলাে এখন কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে । গ্রিক
বিজ্ঞান এবং গণিত তার সর্বোচ্চ শিখরে উঠেছিল সর্বকালের একজন শ্রেষ্ঠ
বিজ্ঞানী আর্কিমিডিসের
(২৮৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) সময় । তরল পদার্থে উধ্বমুখী বলের বিষয়টি এখনাে
বিজ্ঞান বইয়ের পঠনসূচিতে থাকে। গােলীয় আয়নায় সূর্যরশ্মিকে কেন্দ্রীভূত
করে দূর থেকে শত্রুর যুদ্ধজাহাজে আগুন ধরিয়ে তিনি যুদ্ধে সহায়তা
করেছিলেন। গ্রিক আমলের আরেকজন বিজ্ঞানী ছিলেন ইরাতেস্থিনিস (২৭৬
খ্রিস্টপূর্বাব্দ), যিনি সেই সময়ে সঠিকভাবে পৃথিবীর ব্যাসার্ধ বের
করেছিলেন।

মুসলিম সভ্যতার অবদান
আর্কিমিডিসের
পর কয়েক শতাব্দীকাল বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার মন্থরগতিতে চলে। একে বিজ্ঞানের
বন্ধ্যাকাল বলা যেতে পারে। প্রকৃতপক্ষে ত্রয়োদশ শতাব্দীর পূর্বে ইউরোপে
বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসার পুনর্জীবন ঘটেনি। এই সময় পশ্চিম ইউরোপীয় সভ্যতা
বিশেষভাবে গ্রহণ করেছিল বাইজানটাইন ও মুসলিম সভ্যতার জ্ঞানের ধারা । আরব
জগতের গ্রীক জ্ঞান-বিজ্ঞান অনুবাদের মাধ্যমে পরিচিত ছিল । আরবরা বিজ্ঞান,
গণিত, জাতিবিদ্যা, রসায়ন ও চিকিৎসা বিজ্ঞানেও বিশেষ সমৃদ্ধ ছিল । মুসলিম
বিজ্ঞানীদের মধ্যে
জাবির ইবনে হাইয়ান (Jabir Ibn Haiwan) ও
ইবনে সিনা
(৯৭৯-১০৩৭) 'আলকেমির' উন্নতি সাধন করেন । 'আলকেমির' বৈশিষ্ট্য এই ছিল যে
এর মধ্যে এক দিকে যেমন ধর্ম আধ্যাত্মিকতার যোগ ছিল তেমনি আবার রাসায়নিক
শিল্পকৌশল কুশলতার ঐতিহ্যের সাথেও সম্পর্কযুক্ত ছিল । 'আলকেমি' থেকে
বর্তমান কেমিস্ট্রি বা রসায়ন
নামের উদ্ভব । ইবনে সিনা একাধারে ছিলেন রসায়নবিদ, চিকিৎসক, দার্শনিক,
গণিতজ্ঞ এবং জ্যাতির্বিদ । তিনি আর্থিক (প্রকৃতপক্ষে এশিয়া মাইনরের
অধিবাসী) চিকিৎসাবিদ গ্যালনের (Galen, জন্ম 129) তত্ত্বের উন্নতি সাধন করেন
। আরব রসায়নবিদরা বহু রাসায়নিক যন্ত্রপাতির উদ্ভব ঘটান । পাতন
(Filtration), উর্ধ্বপাতন (Distillation), উর্ধ্বপাতন (Sublimation),
প্রভৃতি প্রক্রিয়ার বৈজ্ঞানিক রূপ দান করেন আরবরা এবং চিকিৎসায় রসায়নের
প্রয়োগ তাদের হাতেই পূর্ণতা পায় ।
আবু আব্দুল্লাহ ইবনে মুসা আল-খোয়ারিজমি(Abu Abdullah Ibn Mus
Al-Khwarizmi. মৃত্যু 850) বীজগণিত ও ত্রিকোণমিতির ভীত প্রতিষ্ঠা করেন ।
তার বিখ্যাত গ্রন্থ 'আল জিবর ওয়াল মুকাবিলা' এর নাম থেকে 'আলজেবরা' শব্দের
উৎপত্তি । তার উত্তরসূরীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন পরিব্রাজক আল-বেরুনী
(Al Beruni, 973-1016) এবং বিখ্যাত কবি
ওমর খৈয়াম (Omar Khaiyam, 1019-1135) মুসলিম জ্যোতির্বিদদের মধ্যে অগ্রগণ্য ছিলেন
আল বাত্তানী (Al Battani, 858-929), আল ফারাজী (Al Farazi, মৃত্যু 77)। গ্রহ নক্ষত্রের উন্নতি নির্ণয়ের জন্য
অ্যাস্ট্রোলাব (Astrolab) নামক যন্ত্র আবিষ্কার করেন । জ্যাতির্বিদ্যা গবেষণার আর একটি অতীব প্রয়ােজনীয় যন্ত্র
সেক্সট্যান্ট (Sextant) একাদশ শতকে প্রথম আবিষ্কার করেন
আল খুজান্দী নামে একজন মুসলিম বৈজ্ঞানিক। আলোকতত্ত্বের ক্ষেত্রে ইবনে আল হাইথাম (Ibn-A-Haitham, 965-1039) ও
আল হাজেন
(AI Hazhen, 965-1038) এর অবদান বিশেষ উল্লেখযােগ্য। টলেমী (Ptolemy
127-151) ও অন্যান্য প্রাচীন বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতেন যে কোনো বস্তু দেখার
জন্য চোখ নিজে আলোকরশ্মি পাঠায়। আল-হাজেন এই মতের বিরােধিতা করেন এবং
বলেন যে বস্তু থেকে আলাে আমাদের চোখে আসে বলেই আমরা বস্তুকে দেখতে পাই।
ম্যাগনিফাইং গ্লাস বা আতশী কাচ নিয়ে পরীক্ষা তাঁকে উত্তল লেন্সের আধুনিক
তত্ত্বের কাছাকাছি নিয়ে আসে। প্রতিসরণ সম্পর্কে টলেমীর স্থূল
(Crude)
সূত্র সম্পর্কে তিনি বলেন যে, আপতন কোণ প্রতিসরণ কোণের সমানুপাতিক এটি শুধু
ক্ষুদ্র কোণের বেলায় সত্য ।
0 Comments